বেয়ার্ড টাপির



ডব্লিউ এম বেয়ার্ড নামে এক আমেরিকান প্রকৃতিবিদ ছিলেন। ১৮৪৩ সালের কথা। বন-জঙ্গলে ঘুরে দেখবেন বলে মেক্সিকো গেলেন তিনি। সেখানে দেখা পেয়ে যান বিশেষ শ্রেণীর এক টাপিরের। তার নামানুসারে সেই থেকে টাপিরটার নাম দেয়া হলো বেয়ার্ড টাপির। পরে প্রাণীটি সম্পর্কে পরিপূর্ণ তথ্য হাজির করেন আরেক আমেরিকান প্রকৃতিবিদ ডব্লিউ বি হোয়াইট।

আমেরিকানরা সব ধরনের টাপিরকেই ‘দান্তা’ নামে ডাকে। বেয়ার্ড টাপিরকেও একই নামে ডাকা হয়। আক্সাকা ও ভেড়াত্রুজ এলাকায় তার পরিচিতি অ্যান্টেব্যুরো নামে। কোস্টারিকান, পানামানিয়ানল ও কলাম্বিয়ানদের কাছে তার পরিচিতি আবার ‘মাচো ডি মন্টে’ নামে। মাউটেইন কাউ বা পাহাড়ি গরু হিসেবে পরিচিত বেলিজতের কাছে। বিভিন্ন জায়গায় সে আরো যেসব নামে পরিচিত, সেগুলো হল- তাজসেন ইন তাজেতাল- মেক্সিকো; জঙ্গল হসলাকানদোন মায়া; বিগ এনিমেল- তোজোলাবাল; তুলে কায়া- পানামা।

বেয়ার্ড টাপিরের মুখের রঙ ক্রিম ক্রিম। গলা ও চিবুকে কালচে দাগ থাকে। চোখের ওপরের অংশের রঙ গাঢ় বাদামি থেকে ধূসর বাদামি। মেক্সিকো থেকে দক্ষিণ আমেরিকা পর্যন্ত সম্ভবত বেয়ার্ড টাপিরই সবচেয়ে বড় স্তন্যপায়ী প্রাণী।

দিন-রাত বলে কথা নেই, এরা ব্যস্ত থাকে সবসময়। বিভিন্ন গাছের পাতা আর পড়ে থাকা ফলই এদের প্রিয় খাবার। পানিতে সাঁতার কাটা আর কাদায় গড়াগড়ি খাওয়া এরা বেশ উপভোগ করে। এ জন্য এরা বেশিভাগ সময়ই পানির কাছাকাছি থাকে। প্রচন্ড গরমের দিন হলে তো কথাই নেই। কাছের যেকোন জলাশয়ে মাথা উপরে রেখে সারা দিন পানিতে কাটায়। মধ্য আমেরিকার মেক্সিকো, বেলিজ, গুয়েতেমালা, হন্ডুরাস, কোস্টারিকা, নিকারাগুয়া, পানামা, কলাম্বিয়া ও ইকুয়েডরজুড়েই ওদের বসবাস। এরা গভীর জঙ্গলের জলাশয়কেই বসবাসের জায়গা হিসেবে বেশি পছন্দ করে।

বেয়ার্ড টাপিররা বেশিরভাগ সময়ই একা একা থাকতে পছন্দ করে। শুধু খাওয়ার সময় এরা দু-চারজন মিলে একটা দল করে। দল করার সময় সদস্যরা যে যত দূরেই থাকুক, তাদের সাথে যোগাযোগের জন্য বিশেষ একটা কায়দা বেছে নেয়। হাতির মতো ছোট্ট শূরটা দিয়ে বাঁশি বাজায় বা চিঁ চিঁ শব্দ করে।

অদ্ভুত এই প্রাণীটি এখন হুমকির মুখে। একে তো বন-জঙ্গল উজাড় হয়ে যাচ্ছে, তার ওপর সুযোগ পেলে মানুষও ওদের মেরে ফেলছে।

Comments

Popular posts from this blog

Lukochuri: A Traditional Game of Bangladesh

বাংলাদেশের জাতীয় পাখি দোয়েল

মানুষের তৈরি প্রথম নভোযান